বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস এর চাকুরি পাওয়া একজন চাকুরি প্রার্থীর
কাছে খুবই আরাধ্য বটে। কিভাবে আপনি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একজন সফল
ক্যাডার অফিসার হবেন তা আপনার স্পষ্ট ধারণা নেই। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন
এই পরীক্ষা নিয়ে থাকে। শ্রেষ্ঠ মেধাগুলোকে তুলে আনার জন্য এই
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এখানে ম্যারাথন দৌড়ের মতো আস্তে আস্তে আপনাকে
এগুতে হবে। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিন।
আপনি নবম দশম শ্রেণীর ক্লাশের শিক্ষার্থীদের গণিত, বিজ্ঞান বইগুলো পড়ুন।
ভালো হয় উক্ত ক্লাশের কোনো শিক্ষার্থীকে পড়ালে। কিছু টাকাও পেলেন আবার
বিসিএস প্রস্তুতিটাও হলো। আপনার ছোট ভাই-বোন থাকলে তাদেরও পড়াতে পারেন ।
প্রাথমিক প্রস্তুতির জন্য বাজারে সাম্প্রতিক তথ্যাবলি নিয়ে সংকলন পাওয়া
যায়। যাচাই বাছাই করে একটি ঢাউস সাইজের বই কিনে নিতে পারেন। প্রতিটি
অধ্যায়ের ভূমিকাটুকু ভালো করে পড়ে ফেলবেন । প্রয়োজনে রঙিন কলম দিয়ে দাগিয়ে
রাখবেন।
প্রতিদিন নিয়মিত পত্রিকা পড়বেন। আপনার মাথায় থাকবে বর্তমান বিশ্ব
পরিস্থিতি, বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কার, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বশেষ
তথ্য। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য।
চমকপ্রদ এবং গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলো নোটস আকারে খাতায় লিখে রাখতে পারেন।
পেপার কাটিং অ্যান্ড ক্লিপিংস করে রাখতে পারেন। তবে পেপার কাটিং রাখার আগে
আর্টিকেলগুলো ভালোভাবে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কলম দিয়ে দাগিয়ে রাখবেন।
পরীক্ষার আগে পুনরায় চোখ বুলানোর সময় আপনার সেই তথ্যগুলো কাজে লাগবে।
বাংলা ইংরেজির ক্ষেত্রে নবম দশম শ্রেণীর গ্রামার বই যেগুলো সে সময়ে ফাঁকি
দিয়ে এসেছিলেন, সেগুলো আত্মস্থ করে ফেলুন। বাংলা ইংরেজি রচনা তৈরির
প্রচেষ্টা হাতে নিন। ইংরেজি শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করুন এবং পরীক্ষায় তা
প্রয়োগ করুন। পাঠ্য বইয়ের বাইরেও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন লেখকের উপন্যাস,
ঐতিহাসিক উপন্যাস, অনুবাদ, প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাংলা
ইংরেজি সাহিত্যের লেখক এবং তাদের উল্লেখযোগ্য লেখা সম্পর্কে জানুন। নবম দশম
শ্রেণীর পাটিগণিত-বীজগণিত, জ্যামিতি ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন।
আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখবেন। বিসিএস পরীক্ষায় এজন প্রার্থীর পড়াশুনা, মেধা,
বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের সবরকম উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়। তাই প্রশ্ন
অনেকসময় বুদ্ধিমত্তা যাচাইয়ের জন্যও হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার সর্বোচ্চ
বিচার-বুদ্ধির পরিচয় দিন।
আপনি যে বিষয় নিয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করছেন সে বিষয়টি ভালোভাবে পড়ুন।
কারণ এটি আপনার ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। আপনার বিষয়টি ভালোভাবে জানা থাকলে
আপনি লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করবেন। লিখিত পরীক্ষায়
আপনার পছন্দমতো ২/৩টি বিষয় নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি নাম্বার ওঠে এরকম
বিষয়গুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করুন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। আপনার টেবিলের সামনে
দেয়াল জুড়ে একটা বিশ্ব ম্যাপ এবং বাংলাদেশের ম্যাপ রাখুন। যখন আন্তর্জাতিক
কোনো বিষয় পড়বেন বা বাংলাদেশের কোনো তথ্য জানবেন তখন ম্যাপে দেশটির
অবস্থানের উপর চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার বিশ্ব এবং বাংলাদেশ
সম্পর্কে ভালো জানা হবে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান মনে রাখার দক্ষতা থাকতে হবে। ধরুন বাংলাদেশে প্রতি বছর
কত লক্ষ টন পলিমাটি বন্যার সময় আসে- এই তথ্যটি একটি দেশের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। তাই এধরনের তথ্য মনের মধ্যে গেঁথে রাখুন এবং প্রয়োজনে ছোট্ট
নোটবুকে তা টুকে রাখুন।
আরেকটি কাজ করবেন। একটি বড় আর্ট পেপার নিবেন। সেই পেপারে বিশ্বের সবগুলো
দেশের নাম, প্রেসিডেন্ট- প্রধানমন্ত্রীর নাম, মুদ্রা, স্বাধীনতা কাল,
রাজধানী, প্রধান আমদানী-রপ্তানী পণ্য ইত্যাদি লিখে রাখুন। রুল টেনে
তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ করার ছলে একটি চার্ট তৈরি করে ফেলুন । লিখতে গেলেই আপনার
যে পড়াটা হয়ে যাবে তা এক নিমিষে আপনার চোখে ফুটে উঠবে পরীক্ষার সময়।
দেশগুলো সম্পর্কে আপনি ফুটনোটস ও রাখতে পারেন সেই চার্টে।
মনে রাখবেন আপনি যতবেশি তথ্য ধারণ করতে পারবেন ততবেশি আপনার সম্ভাবনা থাকবে
বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার। আপনি পড়াশুনা বা পার্টটাইম জব করেন। এর
ফাঁকেও আপনার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। বিসিএস পরীক্ষার
প্রস্তুতিতে কোনো টাইম ফ্রেম রাখার প্রয়োজন নেই। তবে আজকাল কোচিং
সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীকে টাইম ফ্রেমে রেখে শিক্ষাদান করে। এটা অনেকের জন্য
ভালোও হতে পারে। তবে নিজে নিজে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটাই সর্বোত্তম। কোচিং
সেন্টার গুলে খাওয়ালেও নিজস্ব সৃজনশীলতা না থাকলে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
হওয়াটা শক্ত হবে। তাই নিজেকেই সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক পর্বে রচনা
আসে। আপনি চেষ্টা করবেন ব্যতিক্রমী রচনাটি লিখতে। রচনাটি লিখতে আপনি যত
তথ্যসমৃদ্ধ করতে পারবেন ততই রচনাটির উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং পরীক্ষকের
মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে। বিগত কয়েক বছরের প্রশ্নগুলো নিয়ে স্টাডি করুন
এবং দেখুন প্রশ্নের ধাঁচ কিরূপ ছিল। রচনাগুলোও দেখুন।
পরিশেষে আরেকটি পরামর্শ। টোফেল, জিম্যাট, জিআরই, স্যাট ইত্যাদির যে কোনো
একটি বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকুন। নেটে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে
খোঁজ নিতে থাকুন। আপনার অজানা বিষয়টা গুগলে সার্চ দিয়ে জেনে নিতে পারেন।
দুনিয়ার সর্বশেষ তথ্যের সাথে আপডেটেড থাকুন। একজন তথ্যসমৃদ্ধ ব্যক্তি একজন
দক্ষ অফিসার। বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই তথ্যটুকু অন্তরে লালন করুন।
আপনাদের জন্য শুভকামনা।
মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন